Skip to main content

Posts

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদের গুরুত্ব ও প্রভাব

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদের গুরুত্ব ও প্রভাব

* আধুনিকালে ঐশ্বরিক মতবাদকে অগণতান্ত্রিক, অযৌক্তিক, প্রতিক্রিয়াশীল বলে সমালোচনা করা সত্ত্বেও এর যে একেবারে কোন গুরুত্ব বা প্রভাব নেই তা বলা যায় না। বিশেষ করে প্রাচীন ও মধ্যযুগে এ মতবাদের গুরুত্ব ও প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণে পরিদৃষ্ট হয়। অজ্ঞতা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে আইন- শৃঙ্খলার প্রতি শাসক ও শাসিত শ্রেণীর মধ্যে কিছুটা পরিমাণে হলেও শ্রদ্ধাবোধ জন্মে। অনেক স্বৈরাচারী শাসককে এ মতবাদ ধর্মীয় অনুশাসনের দিকে অনুপ্রাণিত করে। ফলে তাঁরা রাষ্ট্র শাসনে সে অনুশাসন মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়। সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্রীয় শাসন পরিচালনার জন্য জনগণের মধ্যে এ মতবাদ ঐক্যবোধের প্রয়োজন শেখায়। সর্বোপরি ঐশ্বরিক মতবাদের ফল হিসেবে মধ্যযুগে রাষ্ট্র-গীর্জার মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তার অবসানে শেষ পর্যন্ত পরোক্ষভাবে হলেও আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্র ও ধর্মনিপেক্ষতার বিজয় সূচিত হয়।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদের সমালোচনা

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদের সমালোচনা

* ঐশ্বরিক মতবাদের সমালোচনা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো: ১। বলা হয় যে, এই মতবাদ রাজতন্ত্রের মুখপাত্র। এটি রাজতন্ত্রের প্রতি অধিক মাত্রায় শ্রদ্ধাশীল। ঈশ্বরের সত্যিকার প্রতিনিধি কে? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর ঐশ্বরিক মতবাদে পাওয়া যায় না । ২। এ মতবাদ অযৌক্তিক। এতে বিশ্বাসের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যুক্তির উপর নয় । ৩। এ মতবাদ অগণতান্ত্রিক, কেননা এতে ঈশ্বরই সকল ক্ষমতার অধিকারী এবং শাসক হিসেবে রাজা তাঁর প্রতিনিধি মাত্র। শাসক তাঁর সকল কাজের জন্য ঈশ্বরের নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন, জনগণের নিকট নয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসককে জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকার ব্যাবস্থা করা হয়। কাজেই রাষ্ট্রের উৎপত্তির ঐশ্বরিক মতবাদ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক । ৪। ঐশ্বরিক মতবাদ রাষ্ট্রকে এক প্রকার দৈব প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে। কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্র হচ্ছে মানবীয় প্রতিষ্ঠান। ঈশ্বর বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানের স্রষ্টা হচ্ছে মানুষ। আর মানুষ রাষ্ট্রীয় সংগঠন তৈরী করেছে তাদের পার্থিব প্রয়োজন মেটাবার জন্য। ৫। এ মতবাদ দ্বন্দ্ব কলহের সৃষ্টি করে । প্রচীনকালে গ্রীক ও রোমানদের দ্বারা এ
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদ

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদ

* ঐশ্বরিক মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বাধিক প্রাচীন মতবাদ। ঐশ্বরিক মতবাদের মূল কথা হচ্ছে- রাষ্ট্র ঐশ্বরের সৃষ্টি এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই রাষ্ট্র পরিচালিত। পার্থিব জগতে রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং রাজার মাধ্যমেই ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়। রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ধর্মদ্রোহিতার শামিল। এ মতবাদ অনুসারে রাজা তাঁর যাবতীয় কাজের জন্য ঈশ্বরের নিকট দায়ী থাকবেন, প্রজাদের নিকট নয়। ঐশ্বরিক মতবাদ নির্ভর মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রগুলোকে তাই বলা হয় ধর্মীয় রাষ্ট্র (Theocratic State) । রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং পার্থিব জগতে রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি ঐশ্বরিক মতবাদের সমর্থন পাওয়া যায় প্রাচীনকালে, মধ্যযুগে এমনকি আধুনিক যুগের প্রথম পর্যায়েও। প্রাচীনকালে ইহুদীরা মনে করত রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং ঈশ্বর রাজাকে মনোনয়ন করেছেন। মধ্যযুগেও এই মতবাদের জোর সমর্থন পরিলক্ষিত হয়। সে যুগের চিন্তাবিদ সেন্ট অগাষ্টিন, সেন্ট টমাস একুইনাস, জন অব সেলিসবারী অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি আর ইহলোকে তাঁর প্রতিনিধি হলেন রাজা। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস্ এবং তার পুত্র প্
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

* কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো : ১। সমাজসেবামূলক কার্য সম্পাদন কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সকল ক্ষেত্রে কল্যাণমুখী কর্মসুচি গ্রহণ ও সম্পাদন করে। সমাজের সর্বাধিক মঙ্গলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা, সামাজিক বীমা, বেকারভাতা, বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে । রাস্তাঘাট নির্মান, পানীয় জলের সরবরাহ সুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্য ও পূনর্বাসন ইত্যাদি বিবিধ সমাজ সেবামূলক কার্যাবলী সম্পাদন করে। ২। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ কল্যাণকামী রাষ্ট্র ব্যক্তির স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উম্মুক্ত করে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যক্তি স্বাধীনতার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণ করে । ৩। জীবনযাত্রার মান সংরক্ষণ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নাগরিকদের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান (Minimum standard of living) সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। সমাজের ধনী দরিদ্রের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করে। ৪। সকলের স্বার্থ সংরক্ষণ
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিকাশ

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিকাশ

* স্বৈরাচারী শাসন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার হাত থেকে মুক্তি লাভের প্রচেষ্টা মানুষের দীর্ঘদিনের। অতীতে রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কেবল শাসকশ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণ করা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, অপরাধমূলক কাজ দমন করা ইত্যাদি। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের প্রবক্তা জন স্টুয়ার্ট মিল, হার্বার্ট স্পেনসার রাষ্ট্রের কার্যাবলীকে অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বিধান, রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা, অপরাধীদের শাস্তি ও দন্ড প্রদান প্রভৃতি কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন। এসব কারণে রাষ্ট্রকে পুলিশী রাষ্ট্র বলা হত। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে রাষ্ট্রের কার্যাবলী সম্পর্কে জনগণের মনোভাবে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে। চিন্তাশীল মানুষ পুঁজিবাদের কুফল থেকে বাঁচার জন্য একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা ভাবতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা অধিক মাত্রায় অনুভূত হতে থাকে । সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হবার পর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো জনকল্যাণমূলক নানাবিধ কাজে আত্মনিয়োগ করতে শুরু করে। জাতিসংঘ
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র (Welfare State)

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র (Welfare State)

* জনগণের কল্যাণ সাধনই আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দশ্য। আধুনিক প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই মূলত কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে সেই রাষ্ট্রকে বুঝায় যার সমুদয় সম্পদ ও শক্তিকে নাগরিকের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত করা হয়। যে রাষ্ট্রে ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি ও মঙ্গলের জন্য কর্মসূচী প্রণয়ণ ও বাস্তবায়ন করে তাঁকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলা হয়। কল্যাণ রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মৌলিক চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই রাষ্ট্র পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি এবং সুষম বন্টন নিশ্চিত করে। এছাড়া বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, বেকার ভাতা এবং বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি কল্যাণ রাষ্ট্র মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারকে সমুন্নত রেখে সর্বাধিক কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি সুসম্পন্ন করে থাকে । রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিকের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করাই এই রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য। যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সুইডেন, কানাডা প্রভৃতি রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
সরকার ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Government and State)

সরকার ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Government and State)

* রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত সংস্থা। রাষ্ট্র শাসিত হয় একটি বৈধ সরকার দ্বারা। সরকার ব্যতীত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। রাষ্ট্র ও সরকারকে অনেক সময় একই অর্থে ব্যবহার করা হয়। ইংরেজ দার্শনিক হস রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য করার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেন নি। ফ্রান্সের সম্রাট চতুর্দশ লুই বলতেন, “আমিই রাষ্ট্র” । ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট রাজারা অনুরূপ ধারণা পোষণ করতেন। কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান, যথা: ১। জনসমষ্টি, ভূ-খন্ড, সরকার ও সার্বভৌম ক্ষমতা-এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। সরকার রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান। সরকার একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা প্রকাশিত ও কার্যকর হয়। অধ্যাপক গার্নার রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য সুস্পষ্ট করার জন্য রাষ্ট্রকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রাষ্ট্র যদি জীবদেহ হয় তবে সরকার রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক স্বরূপ। ২। রাষ্ট্র সরকার অপেক্ষা ব্যাপক। রাষ্ট্র দেশের সমস্ত জনসাধারণের সমন্বয়ে গঠিত হয়। কিন্তু সরকার মুষ্টিমেয় মানুষের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংস্থা । ৩। রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ও তত্ত্বগত ধা