*
ঐশ্বরিক মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বাধিক প্রাচীন মতবাদ। ঐশ্বরিক মতবাদের মূল কথা হচ্ছে- রাষ্ট্র ঐশ্বরের সৃষ্টি এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই রাষ্ট্র পরিচালিত। পার্থিব জগতে রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং রাজার মাধ্যমেই ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়। রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ধর্মদ্রোহিতার শামিল। এ মতবাদ অনুসারে রাজা তাঁর যাবতীয় কাজের জন্য ঈশ্বরের নিকট দায়ী থাকবেন, প্রজাদের নিকট নয়। ঐশ্বরিক মতবাদ নির্ভর মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রগুলোকে তাই বলা হয় ধর্মীয় রাষ্ট্র (Theocratic State) ।
রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং পার্থিব জগতে রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি
ঐশ্বরিক মতবাদের সমর্থন পাওয়া যায় প্রাচীনকালে, মধ্যযুগে এমনকি আধুনিক যুগের প্রথম পর্যায়েও। প্রাচীনকালে ইহুদীরা মনে করত রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং ঈশ্বর রাজাকে মনোনয়ন করেছেন। মধ্যযুগেও এই মতবাদের জোর সমর্থন পরিলক্ষিত হয়। সে যুগের চিন্তাবিদ সেন্ট অগাষ্টিন, সেন্ট টমাস একুইনাস, জন অব সেলিসবারী অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি আর ইহলোকে তাঁর প্রতিনিধি হলেন রাজা। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস্ এবং তার পুত্র প্রথম চার্লস্ ঐশ্বরিক মতবাদে সমর্থন স্থাপন করে প্রজাদের অধিকার অস্বীকার করেন । ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই এই মতবাদে যে শুধু বিশ্বাসী ছিলেন তা নয়, তিনি নিজেকে ঈশ্বরের বরপুত্র বলে মতে করতেন। তবে আধুনিককালে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ, জাতীয়তাবাদ, যুক্তিবাদ ও গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারনার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের ঐশ্বরিক মতবাদ সংক্রান্ত ধারণা দুর্বল হতে থাকে।
Comments
Post a Comment