*
স্বৈরাচারী শাসন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার হাত থেকে মুক্তি লাভের প্রচেষ্টা মানুষের দীর্ঘদিনের। অতীতে রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কেবল শাসকশ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণ করা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, অপরাধমূলক কাজ দমন করা ইত্যাদি। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের প্রবক্তা জন স্টুয়ার্ট মিল, হার্বার্ট স্পেনসার রাষ্ট্রের কার্যাবলীকে অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বিধান, রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা, অপরাধীদের শাস্তি ও দন্ড প্রদান প্রভৃতি কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন। এসব কারণে রাষ্ট্রকে পুলিশী রাষ্ট্র বলা হত।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে রাষ্ট্রের কার্যাবলী সম্পর্কে জনগণের মনোভাবে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে। চিন্তাশীল মানুষ পুঁজিবাদের কুফল থেকে বাঁচার জন্য একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা ভাবতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা অধিক মাত্রায় অনুভূত হতে থাকে । সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হবার পর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো জনকল্যাণমূলক নানাবিধ কাজে আত্মনিয়োগ করতে শুরু করে।
জাতিসংঘের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, “যে রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধা প্রদান করে এবং বেকারত্ব কিংবা অসুস্থ্যতা বা অন্য কোন কারণে জীবিকা অর্জনে ব্যর্থ হলে জনগণের পূর্ণ নিশ্চয়াতা বিধান করতে পারে তাকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলা হয়।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কল্যাণমূলক কার্যাদির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। মূলত সামজতন্ত্রকে প্রতিরোধ করার জন্য পুঁজিবাদী বিশ্ব বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্ম পন্থা গ্রহণ করে। এই ভাবে চরম পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মাঝামাঝি একটি মধ্যম ব্যবস্থা হিসেবে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে । বর্তমান বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কম-বেশী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
Comments
Post a Comment