Skip to main content

রাষ্ট্রের উপাদান (Elements of The State)

*

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও, রাষ্ট্রের চারটি মৌলিক উপাদানের ব্যাপারে সবাই একমত। অধ্যাপক গার্নারের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে আমরা চারটি উপাদান লক্ষ্য করি যথা:-

১। জনসমষ্টি :
রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান উপাদান হল জনসমষ্টি। জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্রকে কল্পনা করা যায় না। কোন ভূ-খন্ডে একটি জনসমষ্টি স্থায়ীভাবে বসবাস করলেই কেবল রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে। রাষ্ট্রের জনসমষ্টি এমন হওয়া উচিত যাতে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনায় জনশক্তির অভাব না ঘটে। প্রাচীন গ্রীক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ মনে করতেন যে স্বল্প জনসংখ্যা সুশাসনের পক্ষে অপরিহার্য। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে পরোক্ষ গণতন্ত্র, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, যোগাযোগ মাধ্যমের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে বৃহৎ জনসংখ্যা সুশাসনের পথে অন্তরায় নাও হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। তবে একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা সে রাষ্ট্রের সম্পদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া কাম্য। দার্শনিক এরিষ্টটলের মতে “রাষ্ট্রের জনসংখ্যা এত কম হবে না যাতে রাষ্ট্রীয় কাজে লোকের অভাব ঘটে, আবার তত বেশী হবে না যাতে রাষ্ট্র তাদের ভরণপোষণ করতে অপারগ হয়।” একটি দেশের সম্মান ও গৌরব নির্ভর করে সে রাষ্ট্রের নাগরিকের শিক্ষা ও চরিত্রের উপর, জনসংখ্যার বা আয়তনের উপর নয়।

২। নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড :
নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড ছাড়া কোন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। জনসমষ্টি যেমন রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য তেমনি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । ভূ-খন্ড বলতে শুধুমাত্র স্থলভাগকে বুঝায় না। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নদ-নদী, রাষ্ট্রের সীমানায় প্রবাহিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাগর-মহাসাগরের জলসীমা এবং উপরস্থ আকাশ সীমাকে বুঝায়। রাষ্ট্রের আয়তন বড় হতে পারে। আবার ছোটও হতে পারে । রাষ্ট্রের ভূ-খন্ড অখন্ড হতে পারে আবার খন্ডিত হতে পারে। এমনকি কতকগুলো দ্বীপের সমষ্টি হতে পারে। যেমন ইন্দোনেশিয়া কতকগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত, আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা ও হাওয়াই অঙ্গরাজ্য মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। দার্শনিক রুশো অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বৃহৎ রাষ্ট্র পরিচালনা করা অসুবিধাজনক । তিনি বলেন “রাষ্ট্রের আয়তন যত ক্ষুদ্র হবে সে রাষ্ট্র তত শক্তি সম্পন্ন হবে।” মূলতঃ রাষ্ট্রের শক্তি নির্ভর করে বিভিন্ন উপাদানের উপর।

৩। সরকার :
রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান হল সরকার । সরকার বলতে সেই সুগঠিত সংগঠনকে বুঝায় যারা আইন প্রণয়ণ, শাসন ও বিচার বিভাগীয় কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে। সরকার শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার রাষ্ট্রের ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করে থাকে। আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধি। সরকারের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছা ও রাষ্ট্রের কার্যাবলী সম্পাদিত হয়। সরকার রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি। সরকার অস্থায়ী। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ সরকার পরিবর্তনের অধিকার রাখে।

৪। সার্বভৌমত্ব :
রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান উপাদান হল সার্বভৌমত্ব। রাষ্ট্রের চরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাই হলো সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্বের কারণেই একটি জনসমাজ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র এর অধীনস্ত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আদেশ নির্দেশ প্রদান করতে পারে। সার্বভৌম ক্ষমতার দুটি দিক আছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের বলে রাষ্ট্র সমস্ত জনগোষ্ঠী ও সংঘের আনুগত্য লাভ করে । বাহ্যিক সার্ভভৌমত্বের বলে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ঘোষণা ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। সার্বভৌম ক্ষমতার অভাবে রাষ্ট্র জনপদ, উপনিবেশ বা অধীন রাষ্ট্র বলে গণ্য হবে। ১৯৪৭ সালের পুর্বে ভারতবর্ষের অবস্থা এরকমই ছিল। ১৯৭১ সালে সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জন করে বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ।

Comments