Skip to main content

ভৌত আলােকবিজ্ঞান - অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

*

পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র
৭ম অধ্যায় - ভৌত আলােকবিজ্ঞান
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১) ইয়ং এর বিচিড় পরীক্ষায় চিড়দ্বয়ের ব্যবধান স্বল্প হওয়া প্রয়ােজন কেন? ব্যাখ্যা কর। 
উ: আমরা জানি, ডােরা প্রস্থ, Δx = λD / 2a  বা  Δx ∝ 1 / a যখন λ, D স্থির। অর্থাৎ ডােরা প্রস্থ চিড়দ্বয়ের ব্যবধানের ব্যস্তানুপাতিক। এ কারণে চিড়দ্বয়ের ব্যবধান যত কম হয় ডােরা প্রস্থ তত বড় হয় ফলে ডােরা তত স্পষ্ট দেখা যায়। তাই ইয়ং এর দ্বিচিড় পরীক্ষায় চিড়দ্বয়ের ব্যবধান স্বল্প রাখা হয়।

২) বেগুনী আলাের শক্তি লাল আলাের চেয়ে বেশি কেন? ব্যাখ্যা কর।
উ: আমরা জানি, আলাে ফোটন আকারে নিঃসৃত হয় এবং ফোটনের শক্তি, E = hυ বা E ∝ υ অর্থাৎ আলাে তথা ফোটনের শক্তি এর কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। আমরা জানি, বেগুনি আলাের কম্পাঙ্ক লাল আলাে অপেক্ষা বেশি। ফলে উপরােক্ত সম্পর্ক অনুসারে বেগুনি আলাের শক্তি লাল আলাের চেয়ে বেশি।

৩) অসীম দূরত্বে অবস্থিত বস্তুর আকার অত্যন্ত ছােট হয় কেন? 
উ: বীক্ষণ কোণের জন্য অসীম দূরে অবস্থিত বস্তুর আকার অত্যন্ত ছােট হয়। একটি বস্তু কত বড় বা ছােট দেখাবে তা নির্ভর করে বীক্ষণ কোণের উপর। আমরা জানি, b = aθ। কিন্তু রেটিনা হতে চক্ষু লেন্সের দূরত্ব a নির্দিষ্ট হওয়ায় b ∝ θ। অর্থাৎ θ এর মান যত ক্ষুদ্র হয় b এর মানও তত ক্ষুদ্র হয়। অতএব বলা যায় যে, অসীম দূরত্বে θ এর মান অত্যন্ত ক্ষুদ্র হওয়ায় বস্তুর আকার অত্যন্ত ছােট হয়।

৪) একই আকারের কাছের বস্তু অপেক্ষা দূরের বস্তুকে ঘােট দেখি কেন- ব্যাখ্যা কর।
উ: দূরের জিনিস ছােট দেখার কারণ উত্তল লেন্সে লক্ষ্যবস্তু লেন্স থেকে যত দূরে হবে উত্তল লেন্স লক্ষ্যবস্তুর তত ছােট বিম্ব গঠন করে। মানুষের চোখের লেন্স উত্তল প্রকৃতির তাই চোখের লেন্সে দূরের বস্তুর খর্বিত এবং উল্টো বিম্ব গঠন করে তাই দূরের জিনিস ছােট দেখা যায়।

৫) আলাের ব্যতিচারে সুসঙ্গত উৎসের প্রয়ােজন কেন?
উ: স্থায়ী দশাপার্থক্য ও সমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট আলােক নির্গমনকারী দুটি আলােক উৎসকে পরস্পরের সুসঙ্গত উৎস বলা হয়। দুটি আলােক তরঙ্গের উপরিপাতন ঠিক সমদশায় বা বিপরীত দশায় না হলে, উপরিপাতন বিন্দুটিতে একবার সমদশায় পরক্ষণে আবার বিপরীত দশায় মিলিত হওয়ায় বিন্দুটি একবার উজ্জ্বল পরক্ষণে অন্ধকার হবে এবং সেটা এতাে দ্রুত ঘটে (10-8 s) যে, দর্শনাভূতির স্থায়িত্বকালের (10-1 s) মধ্যে ঘটার কারণে আমরা ব্যতিচার ডােরা না দেখে সমভাবে আলােকিত সাধারণ উজ্জ্বলতাই দেখতে পাব। তাই স্থায়ী ব্যতিচার সৃষ্টির জন্য সুসঙ্গত উৎস অপরিহার্য।

৬) ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষায় ব্যতিচার ঝালরের কেন্দ্রীয় পটির প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।
উ: ইয়ং-এর দ্বিচিড় পরীক্ষায় ব্যতিচার ঝালরের কেন্দ্রীয় পট্টিটি উজ্জ্বল হয়। এর ঔজ্জ্বল্য অন্যান্য উজ্জ্বল ডােরার চেয়ে বেশি হয়। কেন্দ্রীয় পট্টিটি সৃষ্টিকারী লব্ধি তরঙ্গের বিস্তার অন্যান্য উজ্জ্বল ডােরা সৃষ্টিকারী লব্ধি তরঙ্গ অপেক্ষা বেশি হওয়ায় এর ঔজ্জ্বল্য অন্যান্য উজ্জ্বল পট্টি অপেক্ষা বেশি হয়।

৭) অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের সমবর্তন হয় না কেন? ব্যাখ্যা কর।
উ: যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন তলে কম্পমান আলােক তরঙ্গকে একটি নির্দিষ্ট তল বরাবর কম্পনক্ষম করা যায় তাকে আলােকের সমবর্তন বলে। আবার যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলাের স্পন্দনের দিকের সাথে সমান্তরালে অগ্রসর হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে কম্পন গতিপথের লম্ব অভিমুখে থাকার কারণে তা চারদিকে সমান বিস্তারে কম্পিত হয় ফলে এর সমবর্তন ঘটেনা।

৮) “প্রকৃতিতে কোনাে উৎসই সুসঙ্গত নয়”-ব্যাখ্যা কর।
উ: দুটি উৎস থেকে সমদশায় বা কোনাে নির্দিষ্ট দশা পার্থক্যের একই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের দুটি আলােক তরঙ্গ নিঃসৃত হলে তাদের সুসংগত উৎস বলে। প্রকৃতিতে যেকোন একটি উৎসের পরমাণু কর্তৃক নিঃসৃত আলােক তরঙ্গ অন্য উৎসের উপর কোনােভাবেই নির্ভর করে না। তাই দুটি ভিন্ন উৎস থেকে নির্গত দুটি আলাদা আলােক তরঙ্গ একটি নির্দিষ্ট দশা বজায় রাখতে পারে না। এজন্য প্রকৃতিতে কোনাে উৎসই সুসংগত নয়।

৯) কাচে আলােক বৎসর 6.27 x 1012 km বলতে কি বুঝ?
উ: আলােক রশ্মি এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে আলােক বৎসর বলে। কাচে আলােক বৎসর 6.27 x 1012 km বলতে বােঝায় কাচে আলােক রশ্মি এক বৎসরে 6.27 x 1012 km দূরত্ব অতিক্রম করে।

১০) উড্ডয়মান উড়ােজাহাজের ছায়া মাটিতে পড়ে না কেন? ব্যাখ্যা কর।
উ: আমরা জানি, উডডয়মান উড়ােজাহাজ মেঘের উপর দিয়ে চলাচল করে। ফলে এর ছায়া ভূমিতে পড়ার পূর্বেই তা মেঘের উপর পড়ে। যা মেঘ ভেদ করে আর মাটিতে আসে না, এজন্যই উড্ডয়মান উড়ােজাহাজের ছায়া মাটিতে পড়ে না।

১১) আলাের দ্বৈত প্রতিসরন ব্যাখা কর।
উ: কিছু কিছু কেলাস আছে যাদের মধ্যে আলােক রশ্মি গমন করলে তা দুটো অংশে বিভক্ত হয় একে আলাের দ্বৈত প্রতিসরন বলে এবং কেলাসগুলােকে দ্বৈত প্রতিসরাংক কেলাস বলে। দুটো চলে আলােকরশ্মির মধ্যে যেটি আলাের প্রতিসরণের সূত্র মেনে চলে তাকে সাধারণ রশ্মি বলে এবং যেটি প্রতিসরণের সূত্র মেনে চলে না তাকে অসাধারণ রশ্মি বলে। 

১৩) পয়েন্টিং ভেক্টরের দিক তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের দিকে হলেও মান ভিন্ন- ব্যাখ্যা কর।
উ: পরিবর্তনশীল তড়িৎক্ষেত্র ভেক্টর ও চৌম্বক ক্ষেত্র ভেক্টর পরস্পর সমকোণে স্পন্দিত হলে এদের উভয়ের সাথে লম্বভাবে একটি তরঙ্গ শূন্য মাধ্যমে 3 x 108 ms-1 বেগে সঞ্চালিত হয়, ঐ তরঙ্গকে তাড়িত চৌম্বকীয় তরঙ্গ বলে। এটি এক স্থান হতে অন্যস্থানে শক্তি বহন করতে পারে। আর পয়েন্টিং ভেক্টর হলাে তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গের গতিপথে লম্বভাবে স্থাপিত একক ক্ষেত্রফলের মধ্যদিয়ে যে পরিমাণ শক্তি অতিক্রম করে তার পরিমাণ। এই কারণে পয়েন্টিং ভেক্টরের দিক তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গের দিকে হলেও মান ভিন্ন।

১৪) আলােকের বর্ণালি উৎপত্তির কারণগুলাে লেখ।
উ: আলােক রশ্মি যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন আলােক রশ্মি বিভেদতলে বেঁকে যায়। সূর্যের সাদা আলাে সাতটি রঙের সমন্বয়ে সৃষ্টি তাই সূর্যের আলাে প্রিজমে প্রতিসরণের ফলে রশির গতিপথ বেঁকে যায়। ভিন্ন ভিন্ন আলাের জন্য বাঁকার পরিমাণ ভিন্ন হওয়ায় প্রিজমের মধ্যে সাদা আলাে সাতটি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়ে প্রিজম থেকে নির্গত হয়। ফলে পর্দার উপর আমরা বর্ণালি দেখতে পাই। শূন্য মাধ্যম ব্যতীত অন্য যেকোন মাধ্যমে এক এক বর্ণের আলাের বেগ এক এক রকম হয়। এ কারণে একই মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক ভিন্ন ভিন্ন রঙের জন্য বিভিন্ন হয়। সুতরাং বলা যায়, বিভিন্ন বর্ণের আলাের জন্য মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্কের বিভিন্নতার জন্য বর্ণালি উৎপন্ন হয়। 


নিজে কর

১) উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডােরার সৃষ্টির শর্ত লিখ।
২) আলােক তরঙ্গ সমবর্তন হয় কিন্তু শব্দ তরঙ্গের সমবর্তন হয় না কেন?
৩) ব্যতিচার ঝালর বলতে কী বুঝ?
৪) সমতল নিঃসরণ গ্রেটিং বলতে কী বুঝ।

Comments